ইউরোবাংলা ডেস্কঃ বহু দিন থেকেই বিজ্ঞানীরা সৌরজগতের নবম গ্রহ খুঁজে ফিরছেন। সে অপেক্ষার পালা এখন মনে হয় শেষ হতে যাচ্ছে।

১৯৮৩ সালে সংগৃহীত অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ডেটার মধ্যে এমন কিছু আলামত পাওয়া গেছে যা থেকে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে এটি সম্ভবত সৌরজগতের নবম গ্রহের প্রমাণ। প্লুটোকে বামন গ্রহ  হিসেবে পূণঃসংজ্ঞায়িত করার পর যাদের মন খারাপ হয়েছিল এই খবর তাদের মনের দুঃখ কিছুটা হলেও লাঘব করবে।

মাইকেল  রোয়ান-রবিনসন হচ্ছেন একজন প্রথম শ্রেণীর জ্যোতির্বিদ এবং ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন এর প্রফেসর এমেরিটাস। তিনি বলেন, আগের এক মহাকাশ টেলিস্কোপের সংগৃহীত ডেটার মধ্যে সম্ভবতঃ নবম গ্রহ ত্বত্বের প্রমাণ রয়েছে।

১৯৮৩ সালে উতক্ষেপিত অবলোহিত এস্ট্রোনোমিকাল স্যাটেলাইটের সংগ্রহ করা ডেটা থেকে এই তথ্য খুঁজে পাওয়া গেছে। এটি ছিলো পুরো আকাশ প্রদক্ষিনকারী অবলোহিত বর্ণালীর প্রথম অবজারভেটরী। রোয়ান অ্যাটকিনসন ১০ মাস মেয়াদী এই স্যাটেলাইটের পুরনো ডাটা পর্যবেক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি দেখতে চেয়েছিলেন এর মধ্যে এমন কোন তথ্য আছে কিনা যা  আগে যাচাই করে দেখা হয়নি। প্রফেসর একটি পর্যবেক্ষণ এবং অন্য পর্যবেক্ষণের মধ্যে ধীরে ধীরে চলাচলকারী বস্তুগুলির প্রতি সাবধানে মনোযোগ দেন। এটা করার মাধ্যমে তিনি ধুমকেতু ও গ্রহাণুপুঞ্জের মতো দ্রুত গতিশীল বস্তু বাদ দিতে পেরেছিলেন। তিনি বলেন, গ্রহ প্রার্থীদের জন্য অবস্থান পরিবর্তন প্যারালাক্সের কারণে হতে পারে।যেহেতু পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে যার ফলে IRAS এর কৌণিক অবস্থানের পরিবর্তন হয় । জ্যোতির্বিজ্ঞানী তথ্যের শত শত উত্স পরীক্ষা করেছেন, তবে, ১৯৮৩ সালের জুন, জুলাই এবং সেপ্টেম্বরে করা তিনটি পর্যবেক্ষণ তাকে বেশী আকৃষ্ট করেছিলো। পর্যবেক্ষণগুলি ধারণা দেয়  যে নতুন গ্রহটি পৃথিবীর চেয়ে তিন থেকে পাঁচ গুণ বড় হতে পারে। এটি আমাদের নিজ গ্রহের দূরত্বের প্রায় ২২৫ গুণ দূর থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে পারে।

প্ল্যানেট নাইন এর জন্য চলমান অনুসন্ধান

অবশ্য, রোয়ান-রবিনসন একটি সাম্প্রতিক গবেষণা পত্রে স্বীকার করেছেন যে পর্যবেক্ষণগুলি উচ্চ মানের নয়। এটি এই কারণে যে স্যাটেলাইটটি আকাশের যে অঞ্চলটির  ছবি তুলেছিলো তা সাইরাস নামে পরিচিত গ্যাসের ফিলামেন্ট দিয়ে তৈরি। মেঘের মতো গ্যাসগুলি পর্যবেক্ষণকে স্পষ্টভাবে পড়া কঠিন করে তোলে। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে হাওয়াইয়ের প্যান-স্টারস টেলিস্কোপের করা আকাশের  একটি সাম্প্রতিক জরিপ কথিত বস্তুটি রেকর্ড করতে ব্যর্থ হয়েছে। এটি ইঙ্গিত করতে পারে যে নবম গ্রহটি তিনি আবিষ্কার করেছেন বলে যে দাবী তিনি করেছেন  তা বাস্তব নাও হতে পারে। তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের প্লুটোর বাইরে বামন গ্রহগুলোর কক্ষপথ পরীক্ষা করে দেখতে সুপারিশ করেন। এই চেকগুলি সম্ভবত তিনি যে পর্যবেক্ষণগুলি প্রত্যক্ষ করেছিলেন তার জন্য কোন প্রমাণ হতে পারে। নবম গ্রহটি সম্ভবতঃ আমাদের করা অনুমানের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ একটি কক্ষপথে রয়েছে। আমরা যেমনটি মনে করেছিলাম নবম গ্রহ সম্ভবতঃ সেভাবে দূরবর্তী সৌরজগৎকে মহাকর্ষীয়ভাবে বিচলিত করতে সক্ষম হবে না। তবে, অবশ্যই, তার মানে এই নয় যে এটি বাস্তব নয়,” গ্রহবিজ্ঞানী মাইক ব্রাউন, একাধিক টুইটে সেটা উল্লেখ করেছেন। “এর মানে হল যে প্ল্যানেট নাইন অনুসন্ধানকরার সময় আমরা অযাচিতভাবে অন্য কোনো কিছু আবিষ্কার করে ফেলব। প্লুটো এইভাবে আবিষ্কৃত হয়েছিল। টমবাগ লোয়েলের প্ল্যানেট এক্স (যা ছিল না) অনুসন্ধান করছিলেন এবং দুর্ঘটনাক্রমে প্লুটোকে খুঁজে পেয়েছিলেন। প্লুটো ভবিষ্যদ্বাণী করা প্ল্যানেট এক্স ছিল না। মহাকাশ আমাদের অন্বেষণের জন্য নতুন রহস্য সরবরাহ করে চলেছে। সম্প্রতি, বিজ্ঞানীরা একটি গ্রহাণু আবিষ্কার করেছেন যা চাঁদের একটি টুকরো হতে পারে। কিন্তু, আপাতত বলা যায় নবম গ্রহটি যদি থেকেই থাকে, তবে তা আমাদের এড়িয়ে চলছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে