ইউরো বাংলা রিপোর্টঃ টোরি এমপি নুসরাত গনি দাবী করেছেন যে, তিনি বেশী রকমের মুসলিম এই অভিযোগ করে তাকে জুনিয়র মন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ২০২০ সালে মন্ত্রানালয় পূনর্বিন্যাসের সময় তাকে হুইপ অফিসে ডেকে নিয়ে তার পদচ্যুতির কারণ হিসেবে একথা বলা হয়। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি এবিষয়ে জড়িত হতে অস্বীকার করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর একজন মুখপাত্র তাদের দুজনের মিলিত হবার বিষয়টি নিশ্চিত করে। তার দাবি একজন টোরি হুইপ তাকে বলেছিলেন যে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে তার জুনিয়র পরিবহন মন্ত্রী পদ থেকে বরখাস্ত হওয়ার কারণ “তিনি খুব বেশী মুসলিম ” ।
মুখপাত্র আরও বলেন, কথোপকথনের নয় দিন পর মিঃ জনসন “তার গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করে তাকে চিঠি লিখেন” এবং মিস গনিকে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করার জন্য “আমন্ত্রণ” জানান।
তবে এক বিবৃতিতে মিস গনি বলেন: “২০২০ সালের জুন মাসে যখন আমি প্রধানমন্ত্রীকে সরকারী হুইপের কার্যালয়ে আমাকে যা বলা হয়েছিল তা বলেছিলাম, তখন আমি তাকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করতে আবেদন জানাই এবং এটি তদন্ত করার জন্য আহ্বান জানাই।
“তিনি আমাকে লিখেছিলেন যে, তিনি জড়িত হতে পারবেন না এবং পরামর্শ দেন যে আমি যেন অভ্যন্তরীণ কনজারভেটিভ পার্টির অভিযোগ প্রক্রিয়া ব্যবহার করি। আমি আগেই উল্লেখ করেছি, যা ঘটেছে তা সরকারী বিধির খুব উপযুক্ত ছিল না।”
“গতকাল আমার বিবৃতিতে আমি সতর্ক ছিলাম যাতে কোনও নাম উল্লেখ না করা হয় বা প্রধানমন্ত্রীকে ফাঁসানো না হয়। আমি যা চেয়েছি তা হল তার সরকার এটিকে গুরুত্ব সহকারে নেবে, সঠিকভাবে তদন্ত করবে এবং নিশ্চিত করবে যে অন্য কোন সহকর্মীকে একই ধরণের পরস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে না। আমার অনেক কিছু আছে যা আমি রাজনীতিতে অর্জন করতে চাই, অন্তত মানবাধিকার এবং গণহত্যা নিয়ে আমার প্রচারণা নয়, এবং আমি গভীরভাবে হতাশ যে বিষয়টি এখানে এসে ঠেকেছে।”
চিফ হুইপ মার্ক স্পেনসার শনিবার প্রকাশ করেছেন যে তিনি হলেন সেই হুইপ যার সম্পর্কে মিস গনি এই দাবি করেছেন। তবে তিনি সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
মিসেস ঘানি, ইস্ট সাসেক্সের ওয়েল্ডেন-এর এমপি। তিনি বলেন। হুইপ তাকে ডেকে নিয়ে বলেন, একজন মুসলিম মহিলা মন্ত্রী হিসেবে তার অবস্থান নিয়ে অন্য কলিগরা বিব্রত। একথা শোনার পর তিনি পদত্যাগ করার কথা বিবেচনা করেন।
তিনি আরও বলেন যে, তারা তাকে বলেছে যে, উদ্বেগ রয়েছে “আমি দলের প্রতি অনুগত নই কারণ আমি ইসলামোফোবিয়ার অভিযোগের বিরুদ্ধে দলকে রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট কাজ করিনি”।
এবং তিনি বলেন যে, তাকে সতর্ক করা হয়েছিল যদি তিনি ইসলামোফোবিয়া নিয়ে দাবী উত্থাপন করতে থাকেন তবে তার ক্যারিয়ার এবং খ্যাতি “নষ্ট” হবে।
মিস গনির অভিযোগ এমন সময় এসেছে যখন হুইপদের কর্ম্পদ্ধতি নিয়ে রক্ষনশীল দলে ব্যপক বিতর্ক শুরু হয়েছে। হুইপের কৌশল কে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে, কারণ তারা পার্টি লাইন অনুসরণ করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য বা এমনকি এটি বিবেচনা না করার জন্য এমপিদের ব্ল্যাকমেইল করছেন বলে সম্প্রতি উঠে এসেছে।
হুইপদের কাজ হল সংসদীয় কাজে এমপিদের তাদের দল যেভাবে চায় সেইভাবে ভোট দেওয়া নিশ্চিত করা। তিনিই প্রশ্নবিদ্ধ হুইপ প্রকাশ করে চিফ হুইপ মার্ক স্পেন্সার বলেছেন, অভিযোগগুলি “সম্পূর্ণ মিথ্যা”।
“এই বিষয়ে অন্যান্য হুইপদের যাতে না টানা হয় তা নিশ্চিত করার জন্য আমি সামনে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই অভিযোগগুলি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং আমি সেগুলিকে মানহানিকর বলে মনে করি। আমি কখনও আমাকে উধৃত করে বলা এই শব্দগুলি ব্যবহার করিনি। এটা হতাশাজনক যে মিসেস গনি এই এভিযোগ সামনে আনার আগে আনুষ্ঠানিক তদন্তের জন্য কনজারভেটিভ পার্টির কাছে বিষয়টি উল্লেখ করতে অস্বীকার করেছেন। আমি সিং তদন্ত কমিটির কাছে ইসলামোফোবিয়ার প্রমাণ সরবরাহ করেছি। কমিটি তার রিপোর্টে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা দাবিগুলির কোনও বিশ্বাসযোগ্য ভিত্তি নেই।”
কনজারভেটিভ এমপি মাইকেল ফ্যাব্রিক্যান্ট, যিনি সম্প্রতি মিঃ জনসনকে সমর্থন করছেন, বলেছেন যে, তিনি মিস ঘানির “অজুহাত” আমলে নেন নি কারণ তিনি “স্পষ্টতই একজন মুসলিম” নন।
এলবিসি রেডিওকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি নুসরাত গনির অভিযোগকে দূর্গন্ধযুক্ত বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, গনি দাবী করছেন যে কেউ তাকে বলেছে যে তিনি মুসলিম এজন্য সমস্যা হচ্ছে। আমি মনে করি তিনি আসলেই মুসলিম নন। সে কোন ধর্ম সে সম্পর্কে আমার কোনও ধারণা ছিল না। লেবার এমপি কিথ ভাজ, যিনি দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত ছিলেন, আমি জানি কারণ আমরা এটি নিয়ে আলোচনা করেছি, তিনি আর এমপি নন, তবে তিনি একজন গোয়ান খ্রিস্টান এবং অন্যরা হিন্দু এবং অন্যরা মুসলিম এবং অন্যকোন ধর্মের। কিন্তু তার বিষয়টি স্পষ্ট ছিল না তাই এটি আমার কাছে বরং একটি খোঁড়া অজুহাত বলে মনে হয়।”
উপ-প্রধানমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেছেন, মিস ঘানি এখনও একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করতে পারেন, যা এই বিষয়ে তদন্তের সুযোগ দেবে। তিনি রবিবার স্কাই নিউজের ট্রেভর ফিলিপসকে বলেন: “এটা অবিশ্বাস্যভাবে গুরুতর, আমাকে শুরুতে পরিষ্কার করে বলতে দিন, কনজারভেটিভ পার্টিতে যে কোন বৈষম্য, যে কোন ইসলামোফোবিয়ার প্রতি আমাদের একেবারেই শূন্য সহনশীলতা রয়েছে।”
মিঃ রাব যোগ করেন, এটি “খুবই অস্বাভাবিক” যে মিঃ স্পেন্সার প্রকাশ করেছেন যে তিনি অভিযুক্ত ব্যক্তি। কিন্তু তিনি এটি “স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছেন”।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ বলেছেন যে। মিস গনি একজন বন্ধু এবং তার দাবিগুলি “খুব গুরুতর” এবং এর “যথাযথ তদন্ত” প্রয়োজন।
আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করলে আমি তাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করব – তার কথা অবশ্যই শুনতে হবে,” তিনি যোগ করেন।
মিসেস গনি সানডে টাইমসকে বলেন, তার অভিজ্ঞতা ছিল “পেটে ঘুষি খাওয়ার মতো। আমি অপমানিত এবং অসহায় বোধ করছিলাম”।
তিনি আরো দাবি করেন যে, তাকে হুমকি দেয়া হয়েছিলো যে, যদি তিনি বিষয়টি নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করেন তবে তিনি সহকর্মীদের বয়কটের সম্মুখীন হবেন এবং তার খ্যাতি ও ক্যারিয়ার উভয়ই হুমকির মুখে পড়বে।
” আমি যখন বিষয়টির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম, স্পষ্ট করে দিয়েছিলাম যে আমার পরিচয় সম্পর্কে আমি খুব কমই করতে পারি তখন আমাকে একই কাসুন্দি শোনানো হয় যে, বর্ণবাদিতা চিহ্নিত করা খুবই কঠিন এবং দলকে রক্ষার জন্য আমার আরো অনেক কিছু করা দরকার। ”
“এটা আমার কাছে খুব স্পষ্ট ছিল যে হুইপ এবং ১০ নম্বর আমার শেকড় এবং বিশ্বাসের কারণে অন্যদের চেয়ে আমার কাছে আনুগত্যের অতি পরকাষ্ঠা দাবী করে।”