বাড়ি ইউকে খেলার মাঠে নামাজ পড়ার দায়ে স্কুল ছাত্রকে বহিস্কারের হুমকি শিক্ষকের

খেলার মাঠে নামাজ পড়ার দায়ে স্কুল ছাত্রকে বহিস্কারের হুমকি শিক্ষকের

68
0

ইউরোবাংলাঃ মুসলিম ছাত্রকে মধ্যাহ্ন বিরতির সময় নামাজ পড়ার অপরাধে একজন শিক্ষক তাকে টেনে একপাশে নিয়ে বলেন, তাঁর আচরণ অবাধ্যতামূলক। ইলিং এ সদ্য খোলা সোয়ান একাডেমিতে এই ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ উঠেছে। ১২ বছর বয়সী তাহের তারাওয়ানেহ বলেন, তিনি এবং তার বন্ধুরা যখন বাইরে প্রার্থনা করতে শুরু করেন, তখন একজন স্টাফ তাদের বাধা দেয় এবং ছাত্রটি দাবি করে যে তাদের আক্রমনাত্মকভাবে ‘নামাজ পড়া বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়া হয়’।

© মাইলন্ডন

অন্য ছাত্ররা খেলার মাঠ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরও তাহের তাঁর নামাজ পড়া চালিয়ে যান কারণ সে ইতোমধ্যেই তাঁর নামাজ শুরু করেছেন এবং তা শেষ হয়নি। এ সময় ওই কর্মী তার কোমর ধরে টান দেন এবং তার ব্লেজার মাটি থেকে তুলে ফেলেন, যা তিনি প্রার্থনা মাদুর হিসেবে ব্যবহার করছিলেন।

তাহেরকে বাকী সময়ের জন্য স্কুল থেকে বাড়িতে ফেরত পাঠানোও হয়। স্কুল তাকে একটি বিবৃতি স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। তবে তাহের বলেন, মাঠে যা ঘটেছে বিবৃতিতে তা সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়নি।

তার বাবা মুহাম্মাদ মাইলন্ডনকে বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন না যে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে অ্যাক্টনের গানার্সবারি লেনে খোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কর্মীদের প্রার্থনা করার সময় তার ছেলেকে “চ্যালেঞ্জ” করা উচিত হয়েছে।

তাহের বলেছেন যে, তিনি খেলার মাঠে প্রার্থনা করতে গিয়েছিলেন কারণ স্কুল ভ্রমণের কারণে স্কুলের প্রার্থনা কক্ষটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল এবং তাকে এবং তার বন্ধুদের লাইব্রেরিতে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।

ঐ দিন কথিত শিক্ষক ছাত্রদের ডেকে নিয়ে বলেন, তিনি নিজে একজন মুসলিম এবং ছাত্রদের খেলার মাঠে নামাজ পড়া উচিত হয়নি। আমরা আমাদের বাচ্চাদের নির্দিষ্ট বিশ্বাসের জন্য শিক্ষিত করার চেষ্টা করি এবং কোন স্টাফকে তাদের চ্যালেঞ্জ করতে হবে এমন পরিস্থিতি তৈরী করা উচিত নয় ।

“এটা আমার বোধগম্য যে, অন্য শিশুরা পালিয়ে গিয়েছিল কারণ তারা এই স্টাফ সদস্যের চিৎকারে ভয় পেয়ে গিয়েছিল। জরুরী কিছু না হলে তাহের তার প্রার্থনা বন্ধ করতে অনুমিত নয়। তাই এই স্টাফের তাকে বাধা দেওয়া এবং তারপরে আমার ছেলেকে হেনস্থা করা, এটি গ্রহণযোগ্য নয়।”

ঘটনার সিসি টিভি ফুটেজ দেখার আবেদন করার পর তাহেরর বাবা-মাকে স্কুলে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু তাদের এই অনুরোধটি তখন প্রত্যাখ্যান করা হয়। তাদের পারিবারিক বন্ধু এলিজাবেথ জেনিডার, যিনি এই সভায় উপস্থিত ছিলেন, বলেন যে, তিনি বৈঠকের ফলাফল নিয়ে বিস্মিত।

তিনি বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক প্রথম যে কথাটি বলেছিলেন তা হলো, তাহেরের নামায পড়া ছিল অবাধ্যতা। তারা তাকে স্কুল থেকে বাদ দেওয়ার কথা ভাবছিল এবং তারা নামাজের পড়ার জন্য আলাদা কোনো সময় অনুমতি দেয় না। এর কোনো মানে হয় না, কারণ তাদের একটি প্রার্থনা কক্ষ আছে, স্কুলের তিন-চতুর্থাংশ শিক্ষার্থী মুসলিম এবং স্বাধীনভাবে আপনার ধর্ম পালন করতে পারা একটি আইনী বাধ্যবাধকতা।

তাহেরের মা স্কুল থেকে তাঁর ছেলের মেধা এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিয়ে অনেক ফোন কল পেয়েছেন। এখন টেবিল পূরো উল্টে গেছে। তাঁর নামাজ পড়াকে অবাধ্যতা হিসবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। তাহের বলেছেন যে তাকে একটি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়েছিল যেখানে তিনি যা বলছিলেন তা টাইপ করা হয়নি।

তিনি ‘গ্রাব’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন এবং তারা ‘গাইডেড’ লিখেছেন। তিনি এখন আতঙ্কিত। তিনি সত্যিই বিচলিত এবং তিনি বলেন যে, তিনি অনুভব করেছিলেন যে, বিবৃতিটিতে সম্মত হওয়া ছাড়া তার আর কোনও উপায় নেই। কারণ তাকে বলা হয়েছিল যে, যদি তিনি তা না করেন তবে এটি তার জন্য একটি বিশাল সমস্যা তৈরি করবে।

তিনি আরো বলেন, তারা এখন তাহেরকে এই স্কুল থেকে বের করে নেওয়ার কথা ভাবছেন। কারণ তারা বিশ্বাস করতে পারে না যে ‘তার ধর্মের কারণে তার প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে’। ‘তাহের বিরতির সময় নামাজ পড়ছিল। মাঠে নামাজ পড়ার আগে সে অন্য ফ্যাসিলিটিজ ব্যবহার করার সুযোগ চেয়ে প্রতাখ্যাত হয়েছে।

অন্য কোন স্থান না পেয়ে সে মাঠের একটি নির্জন স্থান বেছে নিয়েছিলো নামাজ পড়ার জন্য। কিন্তু তাকে বলা হয়েছিল এটি কোন ধর্মীয় স্কুল নয় সুতরাং সে নামাজ পড়তে পারবেনা। এটা ২০২২ সাল এবং আমাদের ছেলে তার ধর্মের কারণে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।

আমি শুরুতেই প্রধান শিক্ষককে অনুরোধ করেছিলাম সত্যের পক্ষে দাড়ানোর জন্য। এবং তাঁর স্টাফের বিরুদ্ধে গেলেও তিনি যেন পেশাগত দৃষ্টিভঙ্গিতে বিষয়টি মোকাবেলা করেন। তবে আমারা ছেলেকে স্কুল থেকে বের করে নেবার কথা ভাবছি। কেননা সে আতংকিত হয়ে এবং কাদতে কাদতে স্কুল থেকে বাড়ী ফিরেছিল।

তাহেরের বাবা-মা স্কুল এবং ইলিং কাউন্সিলের কাছে একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেছেন এবং স্কুল নিশ্চিত করেছে যে এখন একটি আনুষ্ঠানিক তদন্ত চলছে।

আর্ক সোয়ান একাডেমির অধ্যক্ষ ম্যাথিউ নিউবার্গার বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখেছি। যার মধ্যে রয়েছে প্রাপ্ত সমস্ত প্রমাণ পর্যালোচনা করা এবং এর সাথে জড়িত সকলের সাক্ষাৎকার নেওয়া।

তিনি বলেন, “এখন একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করা হয়েছে এবং এটি সুষ্ঠু ও যথাযথভাবে মোকাবেলা করা নিশ্চিত করার জন্য স্বাভাবিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। আমাদের স্কুল সব ধর্মের শিক্ষার্থীদের যে সহায়তা প্রদান করে তার জন্য আমরা গর্বিত এবং আমরা প্রত্যেকের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে