কাবুল, আফগানিস্তান (এপি) – আফগানিস্তানের টোলো টিভির একজন সংবাদ উপস্থাপক ঘোষণাটি পড়ার সময় কাঁদছিলেন। স্কুল থেকে ফিরে আসার পর মেয়েদের কান্নার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ত্রাণ গোষ্ঠী এবং আরও অনেকে হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। তালেবানরা এখন পর্যন্ত ষষ্ঠ শ্রেণির বাইরে মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসার আকস্মিক সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। নতুন স্কুল বছরের শুরুতে বুধবার থেকে বড় মেয়েদের জন্য স্কুলগুলো পুনরায় খোলার কথা ছিল।
নিষেধাজ্ঞা এমনকি তালেবান-নিযুক্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়কেও অপ্রস্তুত করে ফেলেছে। আফগানিস্তান জুড়ে অনেক জায়গায়, উচ্চতর গ্রেডে কিছু মেয়ে স্কুলে ফিরে আসার পর তাদের বাড়ীতে ফিরে যেতে বলা হয়। তালিবানের মধ্যে থাকা কট্টরপন্থীদের তুষ্ট করার জন্য এই পদক্ষেপ নেয়া হয়ে থাকতে পারে। তবে এর ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে তালিবানর আরো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার হুমকিতে রয়েছে।
বিশ্ব আফগানিস্তানের নতুন শাসকদের আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিতে অনিচ্ছুক এই উদ্বেগের কারণে যে তালেবানরা একই ধরনের কঠোর পদক্ষেপ এবং বিধিনিষেধ আরোপ করবে – বিশেষ করে নারীদের শিক্ষা ও কাজের অধিকার সীমিত করবে – যেমনটি তারা আগে ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে দেশটি শাসন করার সময় করেছিলো।
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা বৃহস্পতিবার অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানিয়েছে যে এই ঘোষণায় তারা খুবই হতাশ। “আমি মনে করি যে গতকাল আমাদের সকলের জন্য একটি খুব বিভ্রান্তিকর দিন ছিল,” আফগানিস্তানে ইউনিসেফের শিক্ষা বিষয়ক প্রধান জ্যানেট ভোগেলিয়ার বলেন। “আমরা আসলে অন্ধকারে ছিলাম,” আফগানিস্তানে ইউনিসেফের যোগাযোগ প্রধান স্যাম মর্ট বলেন। “সমস্ত বার্তা, সমস্ত পদক্ষেপ যা ঘটছে সেগলো দেখে আমরা বিশ্বাস করেছিলাম যে স্কুলগুলি খোলা হচ্ছে, এবং আমরা এটি বুঝতে পেরেছি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আমাদের সহযোগীরাও এটাই বিশ্বাস করেছিল।
কাকতালীয়ভাবে হোক বা না হোক, তালেবান নেতৃত্বকে বুধবার দক্ষিণ কান্দাহার প্রদেশে ডেকে পাঠানো হয়েছিল, মন্ত্রিসভার রদবদলের গুজবের মধ্যে, যা পরে অস্বীকার করা হয়েছে। তালিবান-নিযুক্ত বয়স্ক প্রধানমন্ত্রী হাসান আখুন্দের স্বাস্থ্যের অবনতির খবর পাওয়া গেছে, যিনি একজন কট্টরপন্থী।
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর বিশৃঙ্খল প্রত্যাহারের শেষ সপ্তাহগুলিতে আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে তালেবানরা ক্ষমতা দখল করার পর থেকে, তালেবান নেতাদের মধ্যে বিভাজনের খবর পাওয়া গেছে। হার্ড-লাইনার এবং বাস্তববাদীদের মধ্যে চলছে টানাপোড়েন।
দেশ কিভাবে চালানো হবে বুধবারের সিদ্ধান্তটি সেটি নিয়ে তালিবানদের মধ্যে স্পষ্ট বিভাজনের একটি ইঙ্গিত হতে পারে। তবে এর আগের আফগান সরকারগুলির পরমর্শক হিসেবে কাজ করা বিশেষজ্ঞ তারেক ফারহাদি বলেছেন এই সিদ্ধান্ত তালিবানের জন্য বুমেরাং হবে।
“তারা তাদের কথা না রেখে সত্যিই গোলমাল করেছে, ফারহাদি বলেন।
আফগানিস্তানের পেনপাথ স্বেচ্ছাসেবক দল যা গ্রামীণ এলাকায় সকলের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম প্রচারের জন্য কাজ করে, তালেবান নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করার পরিকল্পনা করছে। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মতিউল্লাহ ওয়েসা একথা জানান। ২০০৯ সালে দক্ষিণ কান্দাহারের তালিবান কেন্দ্রস্থলে দুই ভাই দ্বারা শুরু হওয়া এই সংস্থার গোপন স্কুল রয়েছে এবং হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক সারা দেশে স্কুল সরবরাহ বিতরণ করছে।
বুধবার কাবুলে দুই বোন রাইহানা মির্জাখাইল (১৮) ও সুরিয়া মির্জাখাইল (১৭) তাদের মাওলানা জালালউদ্দিন মোহাম্মদ বালখির স্কুলে উপস্থিত হন। তাদের শিক্ষক একাদশ শ্রেণির জন্য রোল কল করতে শুরু করেন। এরপর অন্য একজন শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে আসেন এবং সমস্ত মেয়েদের বাড়িতে যেতে বলেন।
“আমাদের বলা হয়েছিল যে এটি আর আমাদের স্কুল নয়,” সুরিয়া বলেন। ‘আমরা খুবই হতাশ হয়ে পড়েছি’ তিনি ও তার বোনের স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার।
তারা আমাদের হৃদয় ভেঙে দিয়েছে… আমাদের বাড়িতে আর কিছু করার নেই,” রায়হানা বলেন। “অন্যান্য ইসলামী দেশ তাদের ছেলে ও মেয়েদের শিক্ষিত হওয়ার অনুমতি দেয় এবং এ কারণেই তারা উন্নতি করতে সক্ষম হচ্ছে।
টোলো টিভিতে, ঘোষক সেবাঘাট সেপার বুধবার নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে সাবেক উপ-উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী সোরায়া পাইকিন এবং অধিকারকর্মী মাহবোবা সিরাজের সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় ভেঙে পড়েন। তার কণ্ঠস্বর ভেঙে পড়ে, তিনি কাঁদতে শুরু করেন এবং তার প্রশ্নটি শেষ করার জন্য সংগ্রাম করছিলেন।