-আহসান হাবীব ইমরোজ
সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।
এবার ভিন্ন বিষয়ে আলাপন। আগে ইদুরামি শব্দটা খোলাসা করি। এটি অভিধানে নেই । আজকেই লিখলাম । বাদর থেকে যেমন বাদরামি,ছাগল থেকে ছাগলামি তেমনি ইদুর থেকে ইদুরামি ।
ঈদকে ইদ বানানোর জন্য একটি গোষ্ঠি জানপ্রাণ চেষ্টায় আছেন। গতকালই পেলাম শুবাচ (শুদ্ধ বানান চর্চা) এর ব্যানার কাজে লাগিয়ে একজন অমুসলিম বোন (ভদ্রতার কারণেই নামটি দিলাম না) ১৭টি লেখা একত্রে হাজির করেছেন, কেন ঈদ নয় ইদ হবে। লেখকবৃন্দের অধিকাংশই অপরিচিত। কিন্তু তারা মেধা,শ্রম দিয়ে এ নিয়ে অবিরত লিখছেন । কিন্তু কেন ?
স্বয়ং বাংলা একাডেমি যখন তার নাম বাংলা একাডেমী (বিদেশী শব্দ বিধায় ঈ দেয়া অশুদ্ধ) হিসেবে ৬০ বছর চালু রাখলো এই বিজ্ঞজনেরা তখন কোথায় ছিলেন? ইসলামী পরিভাষাগুলো পরিবর্তন নিয়ে তাদের এই অতিউৎসাহের কারণটা কী ?
এবার বাংলা একাডেমির সাবেক একমাত্র মহাপরিচালক যিনি ২ টার্ম দায়িত্বে ছিলেন এবং বর্তমান মহাপরিচালক (চলমান) বয়ান শুনাই তাহলে পাঠক আন্দাজ করতে পারবেন সমস্যাটা কোথায়।
ঈদ বানানে সমস্যা কোথায়?
২৪ জুন ২০১৭,প্রথম আলোতে লিখেন, মনসুর মুসা: ভাষাবিজ্ঞানী, বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক।ঈদের ঈ-কে ই করার কোনো মানে হয় না। চিরকালের ঈদের বানান বদলানোর প্রশ্ন তোলার আর সময় পাওয়া গেল না! আর কিছু না পারলে বানান বদলানো হয়।
লিখিত ভাষা সম্পর্কে সচেতনতার অভাব থেকেই এমনটা করা হয় বলে দেখি। ঈদকে দীর্ঘ ‘ঈ’ দিয়ে আবহমানকাল থেকেই লেখা হচ্ছে। ইংরেজিতে লেখা হয় Eid -এ E-এর পর i-টা লেখা হয় দীর্ঘ ‘ঈ’ স্বর বোঝানোর জন্যই।
আমি যদি কারও নাম বদলাই, তা ভুল। এতে তার প্রতি অসম্মান প্রকাশ করা হয়। ঈদ তো একটা উৎসবের নাম। নাম ও ট্রেডমার্ক ইচ্ছামতো বদলানো ঠিক নয়। এটা হলো কর্তৃত্বের প্রশ্ন। আজাদ পত্রিকা ৫০ বছর চেষ্টা করেছে ইকবালকে একবাল, ইসলামকে এসলাম লিখতে। টেকেনি। ভাষা বেশি ইডিওসিনক্রেসি বা মতাচ্ছন্নতা পছন্দ করে না।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম, মে ৪, ২০২২ এ
গত বছর ঈদ বানানে ঈদ মোবারক জানানোর ব্যাখ্যা দিয়ে , বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নুরুল হুদা জানান, ঈদ প্রশ্নে জামিল চৌধুরী সম্পাদিত বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান’র অবস্থানের সঙ্গে তিনি একমত নন।
নিজের একক সিদ্ধান্তেই তাই কার্ডে ‘ইদ’-এর পরিবর্তে ‘ঈদ’ ব্যবহার করেছেন তিনি। বিষয়টি সুরাহার জন্য শিগগিরই অভিধান সম্পাদনা পরিষদের সঙ্গে বসবেন বলেও জানিয়য়েছেন নুরুল হুদা।
বাংলা একাডেমি ‘ই’ দিয়ে ইদ লিখলেও সেটা সর্বসাধারণের স্বীকৃতি পায়নি বলে মনে করেন নুরুল হুদা।
তিনি বলেন, বাংলা একাডেমি এ পর্যন্ত যত বানানরীতি করেছে, কোনোটার জন্য কোনো বাইন্ডিংস (বাধ্যবাধকতা) দেয়নি। বাংলা বানানের ভেরিয়েশন প্রচুর। কিছু শব্দ আছে, এখনও যা আমাদের মধ্যে পপুলার। সেদিক থেকে বাংলা একাডেমি মনে করে, যে সমস্ত বানান বাংলা ভাষায় বিভিন্ন সময়ে প্রচলিত হয়েছে, সেখান থেকে কোনো বানান কেউ ব্যবহার করলে তা ভুল বলার কোনো সুযোগ নেই।
মুহম্মদ নুরুল হুদা, মহাপরিচালক,বাংলা একাডেমি
স্বয়ং বাংলা একাডেমি কি করছেন ? আমার হাতে তাদের দুটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আছে তাতে দেখা যায় তারা ঈদ বানানটিই ব্যবহার করছেন। যেমন,
এক) তারিখ : ২১.১০.২০২১
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি -ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে মিলাদ মাহফিল
সমীর কুমার সরকার স্বাক্ষরিত ।
দুই) ১৯.৩.২০২৩ এ ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত অফিস বিজ্ঞপ্তিতে পবিত্র ঈদ উল ফিতরের ছুটি শেষে অফিস সময় সংক্রান্ত ।
উভয় বিজ্ঞপ্তিতেই তারা ইদ নয় ঈদ শব্দই ব্যবহার করেছেন।
এখন প্রশ্ন, বাংলা একাডেমির সাবেক, বর্তমান মহাপরিচালকরা মানেন না। তাদের অফিসও এটা অনুসরণ করেন না । তাহলে বাহিরে যারা নব্য বানান বিশারদ হিসেবে হুক্কা হুয়া করছেন তারা কারা ?
কতিপয় প্রশ্ন জাগে
১. বাংলা ভাষাকে কি তারা মৃতভাষা সংস্কৃতের টাইটানিকে উঠিয়ে ভাসিয়ে দিতে চায় ?
২. বাংলা ভাষায় ৬ থেকে ১০ হাজার আরবি,ফারসি,টার্কিশ ও উর্দূ শব্দ ভান্ডারকে কি তারা মুছে দিতে চায়?
৩. বানান পরিবর্তনের মাধ্যমে কি তারা অর্থের বিকৃতি ঘটাতে চায় ?
যেমন, ঈদ এ সফল হলে তারা একই যুক্তিতে রাসূলকে রাসুল করবেন। সূরাকে করবে সুরা । আর সুরা অর্থ মদ বা পানীয় যা ইসলামে হারাম।
এখন করণীয়,
১. এ বিষয়ে বেশি বেশি বলা এবং লেখা।
২. এবারের ঈদে ব্যাপকভাবে বাংলায় ‘ঈদ মোবারক’ শব্দ লিখে শুভেচ্ছায় ব্যবহার করা। যাতে পিপলস পাওয়ারের কাছ সব ষড়যন্ত্র ভেসে যায়।
আবারো বলছি,বাদরামি, ছাগলামি,পাগলামির ক্ষমতা সীমিত কিন্তু ইদুরামি অত্যন্ত নীরবে আপনার এমনকি জাতির সব খাদ্য,সঞ্চয় এমনকি আব্রু ঢাকার সম্বলটিও শেষ করে দিতে পারে ।
কাজেই আসুন সতর্ক হই। ৫২ মানে শুধু ১৯৫২ সাল নয় প্রতিবছরের ৫২ সপ্তাহই এ দায়িত্ব পালন করতে হবে। ইনশায়াল্লাহ।