ব্রিটেনের রাজার রাজ্যাভিষেকের বছর লন্ডন ব্যুরো অফ টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের মর্যাদাকর সিভিক অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন মানবিক ও সেবামূলক কাজে সম্পৃক্ত লেখক, সাংবাদিক ও সংগঠক মো. আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল।
কমিউনিটির কল্যাণে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ মঙ্গলবার (২ মে) বিকেলে পূর্ব লন্ডনের দ্যা আর্টস প্যাভিলিয়নে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের উদ্যোগে তাঁকে এ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
এক জমকালো অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশিষ্ট কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট, লন্ডন এডুকেশন ট্রাস্ট এর প্রেসিডেন্ট সাংবাদিক মো. আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারলের হাতে অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন অতিথিবৃন্দ।
সন্ধ্যা ৭টায় বারার স্পিকার কাউন্সিলার শাফি আহমেদের স্বাগত বক্তব্যের শুরু হওয়া উক্ত অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন লন্ডন ব্যুরো অফ টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলর মায়ূম তালুকদার, ইন্টারমিন চীফ এক্সিকিউটিভ স্টিফেন হালসি, জিএল এ মেম্বার উমেষ দেসাই, লিড মেম্বার কাউন্সিলর, কাউন্সিলারসহ অন্যান্য কাউন্সিলারগণ আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক ক্যারল বিভিন্ন সামাজিক ও ইসলামিক সংগঠনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি বছরের পর বছর ধরে কমিউনিটির কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। বিশেষ করে বৈশ্বিক করোনা মহামারীর সময় কাউন্সিল অফ মস্ক টাওয়ার হ্যামলেটসের মাধ্যমে জার্নালিজম ও কমিউনিটি এক্টিভিস্ট-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের জন্য ব্রিটেনে বাংলাদেশীদের পরিচিত মুখ সাংবাদিক মো. আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারলকে এই সম্মানে ভূষিত করে কর্তৃপক্ষ। এ বছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট ১২ জনকে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে স্পিকার ও অতিথিবৃন্দ বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তদের স্ব স্ব অবস্থান থেকে কমিউনিটির উন্নয়নে অবদান রাখায় ভূয়সী প্রশংসা করে তাদের হাতে অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন।
উল্লেখ্য যে, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সিভিক অ্যাওয়ার্ড সবচেয়ে প্রেসটিজিয়াস (অতি সম্মানজনক) অ্যাওয়ার্ড। প্রতি বছর একটি নিরপেক্ষ বোর্ডের মাধ্যমে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সাংবাদিকতা এবং চ্যারিটি কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ এই অ্যাওয়ার্ড মনোনয়ন করা হয়।
সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত :
স্বপ্নবান তারুণ্যের উজ্জ্বল প্রতিনিধি মো. আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল। ডাক নাম ক্যারল। জন্মের পর তাঁর পিতা প্রথম নাম রাখেন আব্দুল মুনিম জাহেদী। এরপরে বিলেতে ব্যারিস্টারি পড়ুয়া চাচা আব্দুর রাজ্জাক আহ্লাদ করে একটি আনকমন ইংলিশ ডাক নাম রেখেছেন ক্যারল। বর্তমানে এই নামেই সবার কাছে পরিচিত। তাঁর পিতা মোঃ আব্দুর রহিম জাহেদী ও মাতা রেজিয়া খানম। ১৯৬৬ খ্রীস্টাব্দের নভেম্বরের রবিবার ছিল তাঁর পৃথিবীতে আবির্ভাব দিবস। এই দিনে পরিবারে নতুন এক সূর্যোদয় আলোকিত করে আপন আঙিনায় তার আগমন ঘটে গোলাপগঞ্জ উপজেলাধীন হিলালপুর গ্রামে। তিনি পেশায় একজন সফল ব্যবসায়ী ও সরকারি চাকুরীজীবি।
আত্হারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন শুরু হয় ১৯৭৮ সালে। তারও আগে প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি নিজ গ্রামহিলালপুর বরায়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
আশি ও নব্বই দশকে বাংলাদেশ থেকে যেসব যুবক লন্ডনে পৌছেছেন। তারা এখন অনেকটা পরিণত বয়সে। এদের অন্যতম স্বপ্নবান এক উজ্জ্বল তারুণ্য আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল। একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে যার দুরন্ত পদচারণাঅনেককেই মুগ্ধ করে।
এটা সত্য যে, আমরা চাই বা না চাই প্রতিনিয়ত সমাজ পরিবর্তন হচ্ছে। আর এই সমাজ বলতে ঘর সংসার থেকে শুরু করে আমাদের আশপাশের সবকিছু, স্থলসীমা, জলসীমা, আকাশসীমা এমনকি তার বাইরে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সর্বত্র।
বিশ্বস্ত ও বন্ধুত্ব পরায়ন মো. আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল একজন ঐতিহ্য সচেতন আত্মপ্রত্যয়ী কর্মবীর। ১৯৮৫ সালের ২২জানুয়ারি বাংলাদেশ থেকে বাবা-মা’র সাথে লন্ডনে পাড়ি জমান তিনি। মাত্র এসএসসি পরীক্ষা দিয়েই দেশান্তর হন। এখানে এসে সিটি অ্যান্ড ইস্ট লন্ডন কলেজ, হ্যাকনি কলেজ ও সবশেষে লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করেন। এই সময়তিনি স্থানীয় ইয়ুথ ক্লাবে পার্ট টাইম জব ও বিভিন্ন ভলান্টারি সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন, লন্ডন জীবনের প্রথম দিকে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন কিছুকাল। তিনি ইউরোপের সর্ববৃহৎ ইসলামিক প্রতিষ্ঠান লন্ডন মুসলিম সেন্টার (এলএমসি) ও ইস্ট লন্ডন মসজিদের একজন সক্রিয় সদস্য ও মিডিয়া কমিটির নেতৃত্বদিচ্ছেন। এই প্রতিষ্ঠানের সাথে যারা সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সামনের কাতারে থাকেন। মো. আব্দুল মুনিম জাহেদীক্যারল তাদেরই একজন।
নিবেদিতপ্রাণ সংগঠক মো. আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল এলএমসি সংশ্লিষ্ট আরো কিছু প্রতিষ্ঠানে জড়িত রয়েছেন। তিনি ‘টাওয়ার হ্যামলেটসের ৫৫টি মসজিদের সংগঠন কাউন্সিল অব মস্ক’ এর কোষাধ্যক্ষ।
স্কুল জীবন থেকেই সফলতার সাথে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের দায়িত্ব পালনকরেছেন। স্কুলে থাকাকালীন ক্লাস ক্যাপ্টেন ও স্কাউট লিডার ছিলেন। বাংলাদেশ স্কাউটিং হলো একটি আন্দোলন যার কাজ আনন্দের মধ্য দিয়ে শিক্ষা দান এবং এর মাধ্যমে একজন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠা। স্কাউটিং এর মধ্যে লুকিয়ে থাকে অপার আনন্দ ও স্বাদ। স্কাউট আত্মমর্যাদায় বিশ্বাসী, স্কাউট সবার বন্ধু, স্কাউট বিনয়ী ও অনুগত, স্কাউট জীবের প্রতি সদয়, স্কাউট সদাপ্রফুলস্ন, স্কাউট মিতব্যয়ী এবং স্কাউট চিন্তা, কথা ও কাজে নির্মল। এই স্কাউটস এর মাধ্যমে তিনি সমাজের অনেক উপকার করেছেন এবং নিজেকে একজন কর্মকার হিসেবে গড়েছেন। ১৯০৭ সালে রবার্ট স্টিফেন্সন স্মিথ লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল অফগিলওয়েল সংক্ষেপে বিপি এই আন্দোলনের শুরু করেন।
সাংবাদিক ক্যারল বাল্যজীবনে গ্রামের মসজিদ ও ক্লাবের নেতৃত্বসহ, ফুলবাড়ী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন, সেইধারাবাহিকতায় সুদূর ইংল্যান্ড এসেও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ইসলামিক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকরেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্টাতা সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। গোলাপগঞ্জ কমিউনিটি ট্রাস্ট ইউকে’র প্রধান উপদেষ্টা, হিলালপুর শাপলা সমাজ কল্যাণ সংঘ, অগ্রদূত ছাত্র পরিষদ সিলেট, বৃহত্বর হেতিমগঞ্জ ক্রীড়া সংস্থা এর উপদেষ্টা।
ব্রিটেন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ইউরো বাংলা অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি বিজলিন্ক অ্যাসোসিয়েট গ্রপের চেয়ারম্যান, সিলেটের দৈনিক জালালাবাদ সিন্ডিকেট এর পরিচালক, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন ইউকের প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন সেক্রেটারি, সিলেটে প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের ইউকে কমিটির প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন সেক্রেটারি, রেজিয়া-রহিম মেমোরিয়াল ট্রাস্টের চেয়ারম্যান, রেজিয়া-রহিম গণ পাঠাগারের প্রতিষ্টাতা, গোলাপগঞ্জ ইসলামিক সোসাইটি প্রতিষ্টাতা সভাপতি, ফুলবাড়ী ইউনিয়ন সোসাইটি ইউকে’র প্রতিষ্টাতা সহসভাপতি, লন্ডনবাংলা ডট কম ও এলবিটিভি’র সম্পাদক, অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক ইউরোবাংলার সম্পাদক, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সদস্য ও দৈনিক জালালাবাদ এর লন্ডন ব্যুরো প্রধান ও স্টার লাইট একাডেমীসহ অসংখ্য সামাজিক, ইসলামিক ও ব্যবসায়ীক সংগঠনের সাথে সক্রিয় রয়েছেন। হিউম্যান রাইট ইউকে, বাংলাদেশী মুসলিম ইন ইউকে, গ্রেটার সিলেট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ওয়েলফেয়ারকাউন্সিল ইউকে, গোলাপগঞ্জ হেল্পিং হ্যান্ডস ইউকে, গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্ট ইউ’কে, টি-ফাইভ ট্রেনিং সেন্টারসহ বিভিন্ন সামাজিক ও মানবাধিকার সগঠনের মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে দেশ বিদেশে অনেক জনকল্যাণমুখী, সামাজিক ও ইসলামিক কাজ করে মানব সেবায় নিজেকে নিবেদিত করছেন।
মো. আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল পূর্ব লন্ডনে অবস্থিত লন্ডন এডুকেশন ট্রাস্ট এর একটি প্রতিষ্ঠান ‘ইকরা ইনস্টিটিউট’ নামেএকটি মান সম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে প্রাণান্ত প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। একঝাক সাহসী ও মেধাবী ধর্মীয় মূল্যবোধ সম্পন্নব্যক্তিবর্গের সফল এই উদ্যোগের ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হিসিবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ব্লুগেইট ফিল্ড স্কুলের স্কুল গভর্নর ছিলেন।
আব্দুল মুনিম ক্যারল বাংলাদেশিদের দ্বারা পরিচালিত বিলেতের সর্ববৃহৎ যুব সংগঠন ‘ইয়ং মুসলিম অর্গানাইজেশন ইউকে’র কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ছিলেন। এই সংগঠনের মাধ্যমে সারা দেশব্যাপী যুব সমাজের মধ্যে দাওয়াতি কাজ পরিচালিত হয়। তারুণ্যের নিত্য কর্মচঞ্চলতার খোরাক জোগাড় করেন তারা। বাংলাদেশ থেকে আশা তরুণ সমাজ ও বিলেতে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মকে বহুমুখী কর্মসূচির মাধ্যমে সহায়তা করে এই সংগঠন। এই বাংলাদেশী তরুণরা আজ কেবল নতুনকে গ্রহণ আর সৃজন করছে না, তারা অভিজ্ঞজন বা প্রবীণদেরকেও পাশে নিচ্ছে এগিয়ে যাবার শক্তি হিসেবে। তারুণ্যের স্পর্ধিত আকাঙ্খা থেকেই ইয়ংমুসলিম অর্গানাইজেশনের পথচলার শুরু।
আব্দুল মুনিম ক্যারল সমাজ সেবার পাশাপাশি খেলাধুলোয় বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। বিলেতের জনপ্রিয় তাকওয়াব্যাডমিন্টন ক্লাবের তিনি প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানষ এই ক্লাবের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ব্যাডমিন্টন খেলার আয়োজন, প্রশিক্ষণ, টুর্নামেন্ট আয়োজন, জার্সি ও খেলার সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
নব্বই দশক থেকে নিজের গ্রাম হিলালপুরে প্রতি বছর ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট এর আয়োজন করেঅনেক সুনাম অর্জন করেন, সেখানে লন্ডনসহ দেশের বিভিন অঞ্চলের খেলোয়াড় অংশ গ্রহণ করেছেন। সিলেট জেলা ইনডোর স্টেডিয়ামে জাতীয়ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট আয়োজন করে অনেক সুনাম অর্জন করেন। সেই খেলায় লন্ডন টাওয়ার হ্যামলেট ব্যাডমিন্টন ক্লাবেরচ্যাম্পিয়ন, চিটাগাং ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন ও সিলেট ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নরা অংশগ্রহণ করেন।
একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে দেশ-বিদেশে ব্যাডমিন্টন, ক্রিকেট ও ফুটবল খেলায় সফল আয়োজক তিনি। খেলাধুলার সামগ্রীও খেলার মান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করে অনেক উন্নতমানের খেলোয়াড় সৃষ্টি করে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছেন। ক্রীড়াক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে লন্ডনের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তিনি দেশ-বিদেশে আরো অনেকগুলি সম্মাননা পদক পেয়েছেন।
আব্দুল মুনিম ক্যারল ছোট বেলা থেকেই সাহিত্য-সংস্কৃতির সাথে জড়িত। তার অনেক কবিতা, ছড়া ও প্রবন্ধ বিভিন্ন পত্রিকা ওম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে, যা গ্রন্থ হিসেবে প্রকাশের অপেক্ষায়। সাহিত্য সংগঠক হিসেবেও তার সুখ্যাতি রয়েছে। তিনি সুরমা ইয়ং রাইটার্স গ্রুপ ও নিউ মুন ইয়ং রাইটার্স এন্ড আর্টিস্ট গ্রুপের প্রতিষ্টাতা সভাপতি, সংলাপ সাহিত্য-সংস্কৃতি ফ্রন্টের প্রেসিডিয়াম মেম্বার, সংহতি সাহিত্য পরিষদ, বাংলাদেশ সাহিত্য পরিষদ, রেনেসাঁ সাহিত্য মজলিশ, মুসলিম সাহিত্য সংসদ সিলেট, মোবাইলপাঠাগার সিলেট সহ বিভিন্ন সংগঠনের দাতা ও আজীবন সদস্য। বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশেও আব্দুল মুনিম ক্যারল সহায়ক ভূমিকা পালন করেন। ২০০৭ সালে তিনি লন্ডনে একটি হাউজিং ফেয়ার করে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেন। সিলেটের উল্লেখযোগ্য হাউজিং কোম্পানী সমূহ তখন অংশ গ্রহণ করেছিল। রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং গ্রুপ অব সিলেটের উদ্যোগে আয়োজিত এই ফেয়ারের মিডিয়া পার্টনার হিসেব দায়িত্ব পালন করেবৃটেনের জনপ্রিয় সংবাদ সংস্থা মিডিয়া মহল। এই হাউজিং ফেয়ারের মাধ্যমে দেশের অর্থনী
তিতে অনেক সহায়হক হয়েছে।
একঘেঁয়ে জীবন থেকে ক্ষণিকের জন্য প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে চান আব্দুল মুনিম ক্যারল প্রায়ই তিনি ছুটে যান দেশ-দেশান্তরে। ইউরোপের প্রায় সবকটি দেশ, সৌদি আরব-সহ মধ্যপ্রাচ্য, বসনিয়া, মরক্কো, আলবেনিয়া, ভিয়েনা, মিশর, মিউনিক, জার্মানি, বুলগেরিয়া, তিউনিসিয়া, কেলকাটা, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াসহ প্রায় ৩০টি দেশ ভ্রমণ করেছেন ওস্মৃতিচারণ লিখেছেন তিনি।
মানুষের অত্যন্ত প্রিয়ভাজন সদা অমায়িক, ভদ্র, সজ্জন ও পরোপকারী আব্দুল মুনিম ক্যারল সবসময় প্রাণখোলা হাসিতে মুখটা সকালের আলোর মতো উদ্ভাসিত করে এগিয়ে আসেন উজাড় করা ভালোবাসায়। ব্যক্তিগত জীবনে আবিদা লাকি তার জীবনসঙ্গী। তাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে মুনিমা সুলতানা রাফা সেকেন্ডারি স্কুলের সাইন্স শিক্ষক, ছোট মেয়ে মায়মুনাহ মুনিম রিয়া ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত ও একমাত্র ছেলে মো. আব্দুল মুহাইমিন রাফি ডিগ্রী করে একটি আন্তর্জাতিক কোম্পানিতে ডাটা এনালাইসিস হিসাবে চাকুরি করছে।
আব্দুল মুনিম ক্যারল একজন আদর্শ বাবার সন্তান। তার পিতা মরহুম আব্দুর রহিম জাহেদী ছিলেন সফল ব্যবসায়ী, সমাজসেবক, পরপোকারি ও দাওয়াতী কাজের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। তিনি ইস্ট লন্ডন মসজিদের চেয়ারম্যান, ইসলামিক ফোরাম ইউরোপের কেন্দ্রীয় মজলিশে সূরার সদস্য ও ট্রেজারার, স্টেপনি গ্রীন স্কুলের প্যারেন্ট গভর্নর সহ সুনামের সাথে বিভিন্ন সংগঠনেরদায়িত্ব পালন করে গেছেন। সারাটা জীবন তিনি নিজের পরিবারের মত আত্মিয়-স্বজন ও অন্যান্যদের সেবাদান করেছেন। সত্তর দশকে বিলেতে হাতে গোনা যে কয়জনের নিজস্ব গাড়ি ছিল, তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। ইসলামী আন্দোলনের কাজে বা সামাজিক প্রয়োজনে বিশেষ করে আত্মিয় স্বজনরা তার গাড়ি নিয়মিত ব্যবহার করতেন।
পরিবারে দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আব্দুল মুনিম ক্যারল দ্বিতীয়, বড়বোন রেহানা বেগম ও ছোটবোন রোহানা বেগম বিবাহিত। একমাত্র ছোটভাই আব্দুল মুকাব্বির জাহেদ পুলিশ কনস্টেবল ছিলেন। পরে স্কুল শিক্ষকতা করেছেন। বর্তমানে ড্রাইভিং ইন্সপেক্টর এবং সেবামূলক কর্মকান্ডে জড়িত।
পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আব্দুল মুনিম ক্যারল ও তার ভাইবোনেরা মানবতার কল্যাণে বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠায় এবং গরিব অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন অবিরাম। পিতা মাতার ইন্তেকালের পর ১৯৯৮ সালে প্রথমেই মা-বাবার নামে গোলাপগঞ্জ উপজেলাধীন কুনাচর মহিলা মাদ্রাসার একটি ভবন নির্মাণ করে দেন। এছাড়া নিজের এলাকায় অনেক গরীব অসহায় সম্বলহীনদের গৃহ নির্মাণ, এতীমদের বিয়ে শাদী, চিকিৎসাসেবা ও অনেকের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত সমাজ গড়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন নিরবে।
বাংলাদেশের সিডরের সময় আব্দুল মুনিম ক্যারল মুসলিম এইডের সাথে বরগুনা, বরিশাল, খুলনাসহ সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাপরিদর্শন করে নিজ হাতে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশে তিনি মহামারি ও দুর্যোগকালীন সময়ে আর্থিকসাহায্য প্রদান করেন।
সাম্প্রতিক করোনা মহামারীর চরম দুঃসময়ে গোলাপগঞ্জের ফুলবাড়ী ইউনিয়নে ও আশেপাশের এলাকায় তার পৃষ্ঠপোষকতায় ও হিলালপুর শাপলা সমাজ কল্যাণ সংঘের আয়োজনে অসহায়দের মাঝে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। শীত মৌসুমে নিজের এলাকা জুড়ে গরিব অসহায় ও প্রতিবন্ধীদের জন্য তিনি ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও ঔষধ বিতরণ করে থাকেন। তার সার্বিক সহযোগিতায় গোলাপগঞ্জের হিলালপুরে ফ্রি সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু হয়েছে। টি-ফাইভ প্রফেশনাল ট্রেইনিং সেন্টার এর মাধ্যমে পোশাক শিল্পে দক্ষ জনশক্তি গড়া ও দরিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে শতভাগ কর্মসংস্থান করাই এর উদ্দেশ্য। কর্মহীনদের সম্পুর্ন বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
তিনি আন্তর্জাতিক মানের চ্যারিটি সংস্থা জমজম চ্যারিটেবল ট্রাস্টের একজন পরিচালক, জমজম একটি যুক্তরাজ্যের নিবন্ধিত সামাজিক ট্রাস্ট, অসহায় দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রায় উন্নতি করতে এর যাত্রা শুরু হয় ২০০৩ সালের এপ্রিল মাসে। জ্ম জমের মূল লক্ষ্য লো সচেতনতা প্রচার করা, তহবিল সংগ্রহ করা এবং বিশ্বের কিছু দরিদ্রতম মানুষের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে প্রচেষ্টা চালানো। এটি বর্তমানে প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশে বিভিন্ন সেবামূলক কাজ শুরু করেছে। জম জম বাংলাদেশ একটি অরাজনৈতিক সংস্থা এবং নিবন্ধিত বেসরকারী সংস্থার মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে কাজ করে। তার জন্মস্থান হিলালপুরে জ্ম জম ট্রাস্টের একটি প্রকল্প শুরু হবে খুব শীঘ্রই।
কর্মচঞ্চল আব্দুল মুনিম ক্যারল মনে করেন, সৃজনশীলতা এবং কর্ম তৎপরতাকে যদি আমরা কাজে লাগাতে পারি তাহলে নিশ্চই তারুণ্যের হাত ধরেই প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিশ্বসভায় আমাদের সুনাম বাড়াবে। তার এই দৃঢ়তার সাথে ভারতের সাবেক রাষ্ট্র প্রধান ও বিজ্ঞানী আবদুল কালামের একটি উক্তি সংযুক্ত করা যেতে পারে। তিনি বলেছেন, ‘আকাশের দিকে তাকাও। আমরা একা নই। মহাবিশ্ব আমাদের প্রতি বন্ধুপ্রতীম। যারা স্বপ্ন দেখে ও সেমতো কাজ করে, তাদের কাছেই সেরাটা ধরা দেয়।’
এই সিভিক অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় মো. আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল বলেন, কোন স্বীকৃতি পাওয়ার আশায় আমরা সমাজের জন্য কাজ করি না। বিগত চল্লিশ বছর ধরে, কমিটির কল্যাণের জন্য কাজ করছি শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ও কমিউনিটির মানবতার কল্যাণে। একমাত্র মানবতার সেবায় নিয়োজিত করেছি সারাজীবন, কোন পুরস্কার বা স্বীকৃতির প্রত্যাশা ছাড়াই কাজ করে যাচ্চি অবিরাম। আমার প্রয়াত বাবাও ছিলেন সমাজকল্যাণের একজন নিবেদিত প্রাণ এবং তিনি তার পুরো জীবন বিলীন করেছেন মানুষকে সাহায্য ও কল্যাণের জন্য, বিনিময়ে কিছু নেননি, শুধু দিয়েই গেছেন। একজন আদর্শ পিতার শিখানো পথে এগিয়ে যাচ্ছি।
আমি তাঁর অনুসরণ করার এবং তাঁর শিক্ষা ও মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখার চেষ্টা করি।
আমার স্ত্রী এবং পরিবারের অটল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞ, মাননীয় স্পিকার, মেয়র এবং যারা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন এবং ভোট দিয়েছেন সিভিক অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার জন্য, তারা সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এই স্বীকৃতি একটি মহান সম্মান এবং এটি নিঃসন্দেহে অনেক সমমনা ব্যক্তিকে নতুন উদ্যমে সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং চ্যারেটি কাজে নিযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করবে।
তিনি বলেন, যারা আমাকে কমিউনিটি সেবার জন্য আমার আবেগকে অনুসরণ করতে সক্ষম করার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। আমি এই ক্ষেত্রে আমার কৃতিত্বের জন্য গর্বিত, এবং আমি সম্প্রদায়ের প্রার্থনা এবং সমর্থনে আমার বাকি জীবন মানুষের সেবা চালিয়ে যাওয়ার আশা করি। তারপরও কাজের এমন স্বীকৃতি শুধু আনন্দেরই নয়, এটা অনুপ্রাণিত করে অন্যদের।