পর্ব -১
মোঃ রেজাউল করিম মৃধা।
আমরা যারা প্রবাসী দেশের জন্য সবসময় প্রাণ কাঁদে। দেশে আসতে মন চায় কিন্তু বিশেষ কারন ছাড়া আশা সম্ভব নয়। বাবা মা বেঁচে না থাকলে মনটা যেমন টানে। বাবা মা না থাকলে মনটা তেমন টানে কিনা আপনারাই জানেন? যখন বাবা মা বেঁচে ছিলেন তখন ঘন ঘন দেশে আসতাম। যখন স্ত্রী সন্তান দেশে ছিলো তখননো ঘনঘন দেশে আসা হত কিন্তু এখন স্ত্রী সন্তান সবাই লন্ডনে। মা বাবা চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে বেশ কয়েক বছর।তাই এখন দেশে আসা হয়ে উঠে না তারপরও এক বছর পর না হলে ২/৩ বছর পর পর আসি দেশের টানে ভাইবোন আত্বীয় স্বজন বন্ধুবান্ধবদের এক নজর দেখার জন্য।অথবা পরিবারের কোন বৃহত পারিবারিক অনুস্ঠানে অংশগ্রহন করতে। অর্থাৎ যে কোন উপলক্ষে।
এই বার লন্ডন থেকে দেশে আসার ৩/৪ টি উদ্দ্যেশ্য নিয়েই মূলত আসা। জমিজমা নিয়ে কিছু ঝামেলা তো থাকেই শুধু আমার একার নয় প্রতিটি প্রবাসীরই থাকে। কখনো বেশী সময় নিয়ে আসা হয় না। হয় দুই সপ্তাহ না হয় তিন সপ্তাহ কিন্তু এবার নিয়ত করেছি এবং এক সপ্তাহ বেশী সময় নিয়েই এসেছি। যে কাজই করি না কেন? ভোটার আইডি কার্ড করবো। বা প্রসেস করে জমা দেবো ইন্সা আল্লাহ।
দেশে আসলে আমার এক ভাগ্নে সব সময় আমাকে সহযোগিতা করে ডাক নাম সুজন। সে সব সময় সাথে সাথে থাকে। আইডি কার্ড।এখন প্রশ্ন হচ্ছে কোন ঠিকানায় করবো? ঢাকার বাড়ীর ঠিকানায় নাকি দেশের ঠিকানায়? দেশের বাড়ীতে এখন শুধু মসজিদের হুজুর থাকেন নিকট আত্বীয় কেউ থাকেনা কিন্তু গ্রামের বাড়ীর যাতায়াত অনেক ভালো তারপরও যেতে আসতে গেলে দিন শেষ।কাই সিদ্ধান্ত নিলাম ঢাকার বাড়ীর ঠিকানাই করবো।
এবার বলি কি কি লাগবে?
১/ এস এস সি বা সমমানের সার্টিফিকেট
২/ ডিজিটাল বার্থ সার্টিফিকেট
৩/ পাসপোর্ট , ড্রাইভিং লাইসেন্স বা ফোটো আইডি
৪/ ফোটো কপি পিতা, মাতা কিম্বা স্ত্রী বা স্বামীর।
৫/ পানি, কারেন্ট, হোল্ডিং ট্যাক্স যে কোন বিলের কপি বা প্রভ অফ এ্যাড্রেস।
৬/ সিটিজেনশীপ সার্টিফিকেট
৭/ অজ্ঞিকার নামা।
প্রথম ধাঁপের সব আছে শুধুমাত্র ৪ নাম্বারে বাবা মা কারোরই আইডি নেই বা সেই সময় আইডির প্রচলনও ছিলো না। আমার স্ত্রী ও এখন ও এনআইডি করে নাই। কবে এখন লাগবে ডেথ সার্টিফিকেট।আমি এবার কার্ড জমা দিতে বা করতে পারলে পরের বার তাঁকেও নিয়ে আসবো।
আপনারা জানেন এনআইডি কার্ড খুবই জরুরী। বাধ্যতামূলক। এই কার্ডছাডা বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যাংক একাউন্ড, জমি বেচাকেনা তো দূরের কথা টেলিফোনের একটি সিম কার্ডও কিন্তে পারবেন না।
যে ভাবে এনআইডি কার্ডের কাজ শুরু করি।
দেশে এসেই সকালে উঠেই মিরপুর ২ নম্বর মিউনিসিপাল অফিসে গেলাম হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে। অফিসের ঠিকানা পরিবর্তন করেছে। জিএনজি নিয়ে পুরাতন অফিসের সামনে নেমে পরি। কিন্তু দেখে গেইটের সামনে নতুন ঠিকানা দেওয়া । গেইটে সামনে নামতে দেখেই ভিতর থেকে একজন মুখ বের করে হাত দিয়ে ইশারায় নতুন ঠিকানায় যেতে বললেন।
সামনে থেকে রিক্সা করে সোজা চলে গেলাম নতুন অফিসে। খুবই ভালো সার্ভিস যা কল্পনাতীত। রিক্সা ভাড়া দিয়ে সিঁডি দিয়ে উপরে উঠতেই এক ভদ্র লোক বসে আছেন মুখে সুন্দর দাড়ি। বললেন কি কাজে এসেছেন? বললাম বোল্ডিং ট্যাক্স দিবো।বললেন সোজা যেয়ে হাতের বামে ব্যাংক কাউন্টার। চলে গেলাম দুটি কাউন্টার । আমার সামনে এক কাউন্টারে একজন এবং অপর কাউন্টারে ২/৩ জন লাইনে আছেন।
বললেন আপনার রিছিপ্ট দেন। আমি পুরাতন রিছিপ্ট দিলাম।বললেন ২৯০০ টাকা আমি এক হাজার ত্রে তিনটি নোট দিলাম। ৩০০০ টাকা একশত টাকা ফেরত দিয়ে নতুন রিছিপ্ট দিয়ে দিলেন। অবশ্য আমি বাড়ীর দলিল সহ সব কাগজপত্রই সাথে নিয়ে এসেছি।বের হয়েই নতুন অফিসের সামনে দাডিয়ে ভিডিও করলাম। কেননা প্রতিদিনের আপডেট দিচ্ছি। যেহেতু আমার এই মোবাই সেট এ ইন্টার নেট নেই। শুধু মাত্র ওয়াইফাই দিয়ে চলে যায় বাংলাদেশের জন্য একটি হ্যান্ড সেট নিয়েছি সেই সেটের মাধ্যমে সবার সাথে যোগাযোগ এবং হুয়াট্স আপ, ম্যাসেন্জার কিম্বা অন লাইন ওয়াই ফাই পেলেই চালু হয়ে যায়।
অফিস থেকে বের হয়ে আমার ছোট বোনের ছোট ছেলে নাহিদ হাসান শান্তকে ফোন দিলাম। ও জানে দেশে আসছি কিন্ত সকাল বেলাই যে ওর ওখানে যাবো কা জানেনা। গত কভিড-১৯ এ আমার ছোট বোন নার্গিস। আমাদের সবার ছোট কিন্তু সেই আমাদের সবাইকে ছেড়ে সবার আগে চলে গেছে পৃথিবী ছেড়ে।(ইন্নাহ- রাজিউন)
আমার ছোট বোন আদরের ছোট-বোন । দেশে আসলে সবসময় আমার সাথে সাথে থাকতো।অন্য কোথাও বেড়াতে গেলে সবার আগে ও রেডি থাকতো। দুই ভাগিনা কিন্তু বলতো আমার ভাই আসবে আমি ভাইর বাসায় থাকবো। ভাইয়ের সাথে থাকবো। আজ ও বেঁচে নেই ওর কথা বেশী মনে পরে। ওর বাসায় গেলে কি খাওয়াবে ব্যাস্ততার শেষ ছিলো না। আজ ওর বাসায় গেলে সব স্মৃতি মনে ভেঁসে উঠে। আপনারা সবাই দোওয়া করবেন যেনো আমার ছোট বোন সহ বাবা মা আত্বীয় স্বজন যারা কবর বাসী হয়েছেন তাদের রে যেনো বেহেস্ত নসীব দান করেন আমিন।
দুপুরে শান্তর বাসায় খাওয়া দাওয়া করে একটু রেস্ট নিতেই আছরের আজান দিয়ে দিয়েছে। ঘরেই নামাজ পরে বিদায় নিয়ে এলাম শান্তর ছোট মেয়ে। খুই লক্ষি। শান্ত আমার সাথে রাস্তা পর্যন্ত এলো ওর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মানিকদীর উদ্দ্যশে রওয়ানা দিলাম।
মানিকদী সুজন অপেক্ষা করছে। ১০ নম্বর থেকে ১২ নম্বর পর্যন্ত প্রচন্ড ট্রাফিক। গাড়ীর চাকা যেনো ঘুরে না। অবশেষ মানিকদী ইসিবি চত্তরে এলাম। সুজন কে নিয়ে এবার চললাম ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এর ১৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলারের অফিসের দিকে। পথিমধ্যে দুইবার রিক্সা বদলাতে হচ্ছে ক্যান্টলমেন্টের ভিতরে এক পাশের রিক্সা অন্য দিকে যেতে পারে না।
অবশেষ কাউন্সিলার অফিসে গেলাম। সামনে সিটি কর্পোরেশনের মনোগ্রাম সহ নতু অফিস এক সময় এই মাটিকাঁটা এলাকা ডুবা ও ধানি জমি ছিলো আজ চেহারা পাল্টে গেছে। নতুন নতুন বিল্ডিং হচ্ছে। সেই ধান ক্ষেত আজ স্বর্নের চেয়ে ও দামী।অফিসে ডুকতে পরিবেশ খুব পরিপাটি হাসপাতাল কিম্বা মসজিদের মতো জুতা বাহিরে রেখে ডুকতে হয়।
অফিসে ঢুকে আরো অবাগ হবেন। কাউন্সিলারের দেখা পেতে কমপক্ষে ১০থেকে ১২ টি ধাঁপ অতিক্রম করতে হবে।এল প্রেটনের চেয়ার টেবিল সাজানো । ডুকতেই জিগায় কি কাজে এসেছি। বললাম এনআইডি কার্ড করতে। কি কি লাগবে একজন বললেন অপর জন বললেন এতো দিন কেন করি নাই। তবে একজন বললেন আপনার কি কি আছে আমি বললাম আমার প্রায় সবই আছে। এখন আপনি কিভাবে সহযোগিতা করতে পারেন। দুইটি দেশের দুইটি পাসপোর্ট , এস এস সি সমমানের পরীক্ষার সার্টিফিকেট , বোল্ডিং নাম্বার এবং ডিজিটাল বাথ সার্টিফিকেটের কথা বললাম।
তখন পাশের এক ভদ্র লোক তার পাশে কম্পিউটার নিয়ে বসে থাকা লোকটিকে বললেন চেক করে দেখো? যে কথা সেই কাজ। ডিজিটাল বাথ সার্টিফিকেট দিলাম চেক করে বললেন। সব ঠিক আছে তবে আমার ইংরেজী নামে Md থাকলেও বাংলায় মোঃ নেই অনুরুপ ভাবে বাবার নামে ইংরেজীতে সব ঠিক আছে কিন্তু বাংলায় মোঃ নেই সেই সাথে বাছের এর পরিবর্তে বশির লিখেছে।
যাইহোক
পাশের লোকটি একটি ভিজিটিং কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বললেন। এই কম্পিউটারের দোকানে যেয়ে অন লাইনে আবেদন করুন।আমি আর সুজন আবার রিক্সা করে মোড়ের দিকে গেলাম। কম্পিউটারের দোকানে লাইন রয়েছে। মনে হচ্ছে খুবই ব্যাস্ত। পিছনে বসে অপেক্ষা করলাম একজনের কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে আমি কম্পিউটারের পাশে নির্দিষ্ট চেয়ারে বসলাম। দুই ঘর পূর্ন করতেই চলে এলো রক্তের গ্রুপ। আমি আমতা আমতা করতেই তিনি বললেন পাশেই একটি ক্লিনিকের ঠিকানা দিয়ে বললেন আপনি রক্ত গ্রুপ চেক করে আসেন। ভূল হলে আপনার অনেক সমস্যা হবে।
কি আর করা চলে গেলাম সেই ক্লিনিকে সেখানেও রোগীদের দীর্ঘ লাইন। রিছিপশনে খুবই সুন্দরী একজন রিসিপ্টশনিস্ট। যে কোন বিদেশীকে ফেল করে দিবে। মুখে মাক্স পরা অবস্থায় ও বেশ সুন্দরী লাগছে। হাসি মুখে বলার পরও বললেন ১ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে। তখন মন টা খারাপ হয়ে গেলো এর মাঝে ছোট ছোট বাচ্চাদের কান্না, প্রচন্ড গরম যদিও উপরে ফ্যান ভো ভো করে ঘুরছে।
আমি বলার জন্য চেয়ারের অপেক্ষায় আছি এরই মাঝে সুজন পাশের রুমে গেছে এবং বেডিয়ে আসার সাথে সাথে রিসিপ্টশনিস্ট ডাক দিলেন বললেন ১৫০ টাকা দেন । ২টি দুইশত টাকা দিলাম। একটু পরেই পাশের রুমে ডাক দিয়ে নিয়ে সিরিন্জ দিয়ে রক্ত নিলো। খুই অল্প বয়সের নার্স মনে মনে ভাবলাম এ আর কি করবে কিন্তু না দেখি ঠিকই রক্ত নিলো। ততক্ষনে আমার শরীর গিয়ে অঝঁরে ঘাম ঝরছে।
রক্ত দিয়ে ফ্যানের নিচে একটি চেয়ার খালি পেয়ে বসে পরলাম। সুজন খালি হাঁটাহাটি করছে। কেননা পাত হয়ে যাচ্ছে। ততক্ষনে ঘড়ির কাঁটা প্রায় ১০টা বাঁজে। এরই মধ্য রিপোর্ট এসেছে রক্তের গ্রুপ ও পজেটিভ।
রিপোর্ট নিয়ে কমপিউটারের দোকানে গেলাম। ততক্ষনে আগের সেই লোক চলে গেছেন। নতুন এক লোক বসে আছেন। এরই মধ্যে এক ভদ্র মহিলা এসে একটি সার্টিফিকেট ফেরত দিয়ে রাগারাগি শুরু করলে। আমি আর সুজন নিরব স্বাক্ষী। অনেকক্ষন পর ঠান্ডা হলো কিন্তু কেউ কারো অবস্থান থেকে এক চুল পরিমান সরে দাঁড়ানি। এক দায় হায় নাম্বার ৮৫ এর স্থলে ৮৮ হয়েছে এই টা কম্পিউটার ভূল স্বীকার করছে কিন্তু সাবজেক্টের জায়গায় মহিলার ভূল ছিলো। অবশেষে ঠিক করে দিলেন। মাঝখানে অনেক সময় পার হলো ঠিক করা শেষে মহিলা বললেন আপনাকে কি আবার পয়সা দিতে হবে। ভদ্র লোক এতো সুন্দর ভাবে জবাব দিলেন সবাই হো হো করে হেঁসে উঠলাম।
এবার আমার অন লাইলে আবেদনের পালা আমি মনে হয় আজকের মতো শেষ কিন্তু না এর মাঝেই আরো দুই একজন আসছেন বাড়ী ভাড়া টাংগানো সহ অন্যান্য পিন্ট করতে। আমার পাস্ওয়ার্ড কিছুই বলে নাই ফাইল খুলতে গিয়ে মহা সমস্যা তিনি আবার সেই পূর্বের লোককে ফোন করে পাসওয়ার্ড নিলেন। শেষ পর্যন্ত অন লাইনে এনআইডি আবেদন জমা দিয়ে অনেক রাতেই বাড্ডায় ফরে আসি।
(চলবে)