শেখ হাসিনা সরকারের সময় বিদেশে পাচার হওয়া প্রায় দুই লাখ কোটি টাকার সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। অন্তর্বর্তী সরকার এই পাচারের ব্যাপারে যুক্তরাজ্য সরকারের সহায়তা চেয়েছে। তারা তদন্ত করছে, শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে সম্পদ গড়ে তুলেছেন কি না। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রায় ১৩ বিলিয়ন পাউন্ড অর্থাৎ ২ লাখ কোটি টাকা বিদেশে সরানো হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এই পাচারের মূল উদ্দেশ্য ছিল যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে সম্পদ গঠন করা।
এই তদন্তের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশেষ করে শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ১৫ কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তির উৎস সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার বাংলাদেশ ব্যাংকে এই বিষয়ে আলোচনা করতে এসেছিলেন এবং অনেক কারিগরি সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা এই বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও আলোচনার বিস্তারিত কিছু জানাননি।
আহসান এইচ মনসুর আরও জানান, এই বিশাল পরিমাণ অর্থ প্রধানমন্ত্রীর অজান্তে পাচার হওয়া সম্ভব ছিল না, তবে তদন্ত এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। শেখ হাসিনা ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এই ঘটনা যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টি সরকারের জন্য অস্বস্তির কারণ হতে পারে, কারণ শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক লেবার সরকারের সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে এখন পর্যন্ত টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে কোনো সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠেনি।
এছাড়া, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসও ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। ইউনূসের সরকার এই পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
শেখ হাসিনার শাসনামলে দুর্নীতি, অধিকার লঙ্ঘন এবং ভোট জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছিল। এসবের প্রতিবাদে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত তাঁর সরকারের পতন ঘটায়।