বাড়ি বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের রিপোর্ট এর পর্যালোচনা: রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত বিরোধেই...

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের রিপোর্ট এর পর্যালোচনা: রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত বিরোধেই অধিকাংশ সংখ্যালঘু হত্যা, ধর্মীয় বিদ্বেষের প্রমাণ সীমিত

1
0

বাংলাদেশে সম্প্রতি ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের অভিযোগে ২০২৪ সালের ৪ থেকে ২০ আগস্টের মধ্যে ঘটে যাওয়া ৯টি হত্যাকাণ্ড নিয়ে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ঐক্য পরিষদের দাবি, এই হত্যাকাণ্ডগুলো ধর্মীয় ও জাতিগত বিদ্বেষের কারণে সংঘটিত। তবে নেত্রনিউজ এবং স্থানীয় বিভিন্ন মাধ্যমের অনুসন্ধান থেকে উঠে এসেছে যে এসব হত্যাকাণ্ডের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধর্মীয় বৈষম্যের পরিবর্তে রাজনৈতিক বিরোধ, ব্যক্তিগত শত্রুতা, বা সামাজিক ও পেশাগত কারণে ঘটনা ঘটেছে।

ঘটনার বিস্তারিত:

১. হবিগঞ্জের রিপন শীল:
রিপন শীল একজন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মী এবং বিএনপি সমর্থক ছিলেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৪ আগস্ট বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের সমর্থকদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে রিপনের মৃত্যু হয়। স্থানীয়রা জানান, বানিয়াচং উপজেলা ছাত্রলীগের ডিপজল রিপনের ওপর গুলি চালায়। এই ঘটনা মূলত রাজনৈতিক সহিংসতার অংশ এবং এখানে ধর্মীয় কোনো প্রভাব নেই।

২. বানিয়াচংয়ের এসআই সন্তোষ চৌধুরী:
বানিয়াচংয়ে পুলিশের গুলিতে কয়েকজন সাধারণ মানুষের মৃত্যু হলে জনতা পুলিশ স্টেশনে আক্রমণ করে এবং পুলিশ কর্মকর্তা সন্তোষ চৌধুরীকে পিটিয়ে হত্যা করে। সন্তোষের বিরুদ্ধে জনসাধারণের প্রতি ক্ষমতার অপব্যবহার ও নির্যাতনের অভিযোগ ছিল। এ ঘটনাটি সম্পূর্ণভাবে পেশাগত ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে সংঘটিত হয়েছে, ধর্মীয় উদ্দেশ্য নেই।

৩. রংপুরের হারাধন রায়:
আওয়ামী লীগ নেতা হারাধন রায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সময় নিহত হন। ঘটনার দিন তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণ করতে গেলে পাল্টা আক্রমণে তিনিসহ আরও কয়েকজন নিহত হন। এই হত্যাকাণ্ডকে ঐক্য পরিষদ ধর্মীয় হামলা হিসেবে উল্লেখ করলেও, স্থানীয় মিডিয়া অনুসারে এটি রাজনৈতিক সংঘর্ষের ফল।

৪. সিরাজগঞ্জের সাংবাদিক প্রদীপ কুমার ভৌমিক:
প্রদীপ কুমার ভৌমিক ৪ আগস্ট বিএনপির আন্দোলনের সময় রায়গঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের অফিসে হামলার শিকার হন। আন্দোলনকারীদের আক্রমণের শিকার হয়ে তিনি মারা যান। এখানে ধর্মীয় কোনো ঘৃণা ছিল না বরং রাজনৈতিক সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে এটি ঘটে।

৫. ময়মনসিংহের অজিত সরকার পেনু:
অজিত সরকার স্থানীয় এক মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিরুদ্ধে সাক্ষী ছিলেন এবং আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের পেছনে ব্যক্তিগত শত্রুতা ও রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে বলে জানা যায়। স্থানীয় রিপোর্ট অনুযায়ী, ধর্মীয় বৈষম্য বা বিদ্বেষ এখানে প্রমাণিত নয়।

৬. ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুশান্ত সরকার:
সুশান্ত সরকারকে ব্যক্তিগত শত্রুতা থেকে বন্ধু আশিক মিয়া হত্যা করে। আশিকের কাছে সুশান্তের অর্থ পাওনা ছিল এবং এই অর্থ নিয়ে বিরোধের জেরে তাকে হত্যা করা হয়। ধর্মীয় কোনো প্রভাব এখানে প্রতীয়মান নয়।

৭. নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী টিংকু রঞ্জন দাস:
টিংকু রঞ্জন দাস স্থানীয় চাঁদাবাজির শিকার হন। স্থানীয় হোসিয়ারি ব্যবসায়ীদের ওপর চাঁদাবাজি চালাতে গিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। এটি ধর্মীয় বিদ্বেষের কারণে নয় বরং চাঁদাবাজির ঘটনা।

৮. বাগেরহাটের মৃণাল কান্তি চ্যাটার্জি:
মৃণাল কান্তির হত্যাকাণ্ডের পেছনে জমি সংক্রান্ত বিরোধ থাকতে পারে বলে রিপোর্টে উল্লেখ আছে। এই ঘটনায় ধর্মীয় বিদ্বেষের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

৯. খুলনার ইউপি সদস্য স্বপন বিশ্বাস:
ইউপি সদস্য স্বপন বিশ্বাসকে বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে হত্যা করা হয়। স্থানীয়দের মতে, তার হত্যার পেছনে শত্রুতামূলক কোনো কারণ স্পষ্ট নয় এবং ধর্মীয় কারণ প্রতীয়মান নয়।

সার্বিক মূল্যায়ন

এই বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, ঐক্য পরিষদের রিপোর্টে উল্লেখিত বেশিরভাগ ঘটনা সরাসরি ধর্মীয় বা জাতিগত বিদ্বেষের উদাহরণ নয়। বরং, অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিরোধ, ব্যক্তিগত শত্রুতা, এবং সামাজিক সংঘর্ষ থেকে এই হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে