Home বাংলাদেশ উত্তরারা মাইলস্টোন স্কুলে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত: ২০ নিহত, শতাধিক আহত – জাতীয় শোক...

উত্তরারা মাইলস্টোন স্কুলে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত: ২০ নিহত, শতাধিক আহত – জাতীয় শোক ঘোষণা

44
0

ঢাকা, ২১ জুলাই ২০২৫ (সোমবার):
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান (F-7 BGI) আজ দুপুরে রাজধানী ঢাকার উত্তরা এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়েছে। এই হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে এবং ১৭১ জনের বেশি আহত হয়েছেন, যাদের অনেকেই গুরুতর অবস্থায় রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ঘটনার বিবরণ:

দুপুর ১:০৬ মিনিটে কুর্মিটোলার বিমানঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করে বিমানটি। উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পরেই তা কারিগরি ত্রুটিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং মাইলস্টোন স্কুলের দুইতলা ভবনে সজোরে আঘাত হানে। সঙ্গে সঙ্গে বিশাল শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে এবং ভবনে আগুন লেগে যায়। বিস্ফোরণের অভিঘাতে স্কুলের বেশ কয়েকটি শ্রেণিকক্ষ ও অফিসকক্ষ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

বিমানটিতে থাকা একমাত্র পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তার মরদেহ উদ্ধার করে কুর্মিটোলা সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

দুর্ঘটনার পর পরই আতঙ্ক:

দুর্ঘটনার সময় স্কুলের দিনের শেষ ক্লাস চলছিল এবং শতাধিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারী স্কুল চত্বরে অবস্থান করছিলেন। আকস্মিকভাবে যুদ্ধবিমান ভবনের ওপর পড়ে এবং আগুন ছড়িয়ে পড়লে চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রছাত্রীদের কান্না, ধোঁয়া, ধ্বংসস্তূপ এবং দাউদাউ করে জ্বলতে থাকা ভবনের দৃশ্যটি মুহূর্তেই ট্রমায় পরিণত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকট শব্দের সঙ্গে সঙ্গে আকাশ থেকে একটি যুদ্ধবিমান নিচে এসে পড়ে, সঙ্গে সঙ্গে ভবনের ছাদ ও দেয়াল ভেঙে ধসে পড়ে। বহু শিক্ষার্থী ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়ে।উদ্ধার অভিযান ও চিকিৎসা:

ঘটনার পরপরই সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ এবং র‌্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছে দ্রুত উদ্ধার অভিযান শুরু করে। ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত ও মৃতদেহ বের করা হয়। সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধারকাজে নেতৃত্ব দেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, সিএমএইচ ও বার্ন ইনস্টিটিউটে আহতদের চিকিৎসা চলছে। প্রায় ৬০ জনের বেশি দগ্ধ রোগী বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি।

পড়ুনঃ  নির্যাতনে মৃত্যু’র ঘটনায় রংপুরে তুলকালাম

সরকারের প্রতিক্রিয়া:

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মাদ ইউনুস এক বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

২২ জুলাইকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করেছে সরকার। এদিন সারাদেশে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং সব সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এক মিনিট নীরবতা পালন করবে।

তদন্ত কমিটি গঠন:

বিমান বাহিনী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় যৌথভাবে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বিমানটির ইঞ্জিনে কারিগরি ত্রুটি দেখা দিয়েছিল। পাইলট শেষ মুহূর্তে জনবহুল এলাকার বাইরে গিয়ে অবতরণের চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি।

আইএসপিআরের এক মুখপাত্র বলেন, “পাইলট শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছিলেন খোলা মাঠে জরুরি অবতরণ করতে, কিন্তু সময় ও অবস্থা অনুকূলে ছিল না। তাঁর আত্মত্যাগ জাতি চিরদিন মনে রাখবে।”

শোকের ছায়া শিক্ষাঙ্গনে:

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এখন এক মৃত্যুপুরী। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, “আমরা ভাবতেই পারছি না এমন ভয়াবহ কিছু হতে পারে। আমাদের ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই গুরুতর আহত, কয়েকজনকে আমরা চিনি না—তারা পুড়ে চেনার অযোগ্য হয়ে গেছে।”

একজন শিক্ষার্থীর পিতা বলেন, “সকালে আমার ছেলে স্কুলে গেল, বিকেলে তার নিথর দেহ ফিরে এল। আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।”

🧠 মানসিক সহায়তা ও নিরাপত্তা প্রশ্ন:

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আহতদের শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক সহায়তাও জরুরি। শিশু ও কিশোরদের জন্য ট্রমা কাউন্সেলিং চালু করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

নাগরিক সমাজ ও অভিভাবকেরা প্রশ্ন তুলেছেন – জনবহুল এলাকায় কেন প্রশিক্ষণ ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়? এ বিষয়ে প্রতিরক্ষা ও বিমান বাহিনীর নীতিমালায় পরিবর্তন আনার দাবিও উঠেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here