একটি নতুন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যের কারাগারে আটক বিদেশি যৌন অপরাধীদের এক-চতুর্থাংশ মাত্র পাঁচটি দেশ থেকে এসেছে।
ন্যায়বিচার মন্ত্রণালয়ের (MoJ) তথ্য অনুযায়ী, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের কারাগারে থাকা বিদেশি যৌন অপরাধীদের মধ্যে রোমানিয়া, পাকিস্তান, পোল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং ভারতের নাগরিকের সংখ্যা ৪৫৭ জন। এই তথ্য দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকা ফ্রিডম অভ ইনফরমেশন আইনের আওতায় সংগ্রহ করেছে।
২০২৫ সালের জুন মাস নাগাদ বিদেশি যৌন অপরাধীর সংখ্যা রেকর্ড ১,৭৩১ জনে পৌঁছাছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৯.৯ শতাংশ বেশি। একই সময়ে, একই ধরনের অপরাধে আটক ব্রিটিশ নাগরিকদের সংখ্যা বেড়েছে ৩.৮ শতাংশ।
এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে একাধিক বিদেশি নাগরিকের সংঘটিত সাম্প্রতিক যৌন ও সহিংস অপরাধের প্রেক্ষাপটে। এর মধ্যে রয়েছেন ৪১ বছর বয়সী ইথিওপীয় আশ্রয়প্রার্থী হাদুশ কেবাতু, যাকে গত সপ্তাহে জোরপূর্বক দেশে ফেরত পাঠানো হন। তিনি এসেক্সের এপিং এলাকায় ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরী ও এক নারীকে যৌন নির্যাতন করেন, যা দেশজুড়ে প্রতিবাদের সৃষ্টি করে।
বিরোধী দলের ন্যায়বিচার বিষয়ক মুখপাত্র রবার্ট জেনরিক বলেন, “এই তথ্য আরও একবার প্রমাণ করে যে কিছু নির্দিষ্ট দেশের অভিবাসীদের মধ্যে অপরাধ করার প্রবণতা বেশি। সম্পূর্ণ তথ্য এখনই প্রকাশ করা উচিত। প্রতিদিন কিয়ার স্টার্মার এই বিষয়টি আড়াল করছেন এবং ব্যবস্থা নিচ্ছেন না, ফলে ব্রিটিশ জনগণ ঝুঁকির মুখে পড়ছে।”
সবচেয়ে বেশি যৌন অপরাধের কারণে কারাবন্দি আছেন বাংলাদেশিরা, তারা হয় যৌন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত, নয়তো বিচারাধীন।
কারাগারে থাকা ১৩০ জন বাংলাদেশির মধ্যে ৪২.৩ শতাংশই যৌন অপরাধের মামলায় আটক, যা ব্রিটিশ বন্দিদের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি (ব্রিটিশদের ক্ষেত্রে এই হার ১৯.২ শতাংশ)।
এরপর অবস্থান করছে কেনিয়া (৩৭%), সুদান (৩৫.১%), ইথিওপিয়া (৩৪.৯%), ইরিত্রিয়া (৩৩.৮%), নাইজেরিয়া (৩৩.৬%), মধ্য আফ্রিকা (২৮.৬%) এবং সিরিয়া (২৬.৯%)।
তবে সংখ্যার বিচারে বিদেশি যৌন অপরাধীদের মধ্যে রোমানিয়ার সংখ্যা ১২১ জন। এরপর পাকিস্তান (৯৫), পোল্যান্ড (৮১), ভারত (৮০) এবং আয়ারল্যান্ড (৮০)।
প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বিদেশি সহিংস অপরাধী এসেছে মাত্র ছয়টি দেশ থেকে। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে পোল্যান্ড (৩০৬), এরপর আয়ারল্যান্ড (২৬১), রোমানিয়া (১৮২), জ্যামাইকা (১৬৩) এবং পাকিস্তান (১২৯)।
জুন মাসে বিদেশি সহিংস অপরাধীদের সংখ্যা গত দশ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। এক বছরে এ সংখ্যা বেড়েছে ৮.৮ শতাংশ, যেখানে একই অপরাধে ব্রিটিশ বন্দিদের সংখ্যা বেড়েছে ৪.৮ শতাংশ।
ব্রিটিশ এবং ৫০টি বিদেশি জাতীয়তার বন্দিরা সবচেয়ে বেশি সহিংস অপরাধে জড়িত। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বার্বাডোস (৫২.৪%), সেন্ট লুসিয়া (৫০%), অ্যাঙ্গোলা (৪৮.৬%) এবং জ্যামাইকা (৪৮.২%)।
ব্রিটিশদের ক্ষেত্রে এই হার ৩৬.৪ শতাংশ। এর পরের অবস্থানে রয়েছে লাটভিয়া (৪৪.৫%), রাশিয়া (৪৩.৩%), উগান্ডা (৪৩.৩%), সোমালিয়া (৪২.৬%), পাকিস্তান (৪০.৭%) এবং পোল্যান্ড (৪০.৩%)।
কারাগারে থাকা বিদেশি মাদক অপরাধীদের অর্ধেকই মাত্র চারটি দেশ থেকে এসেছে। এগুলো হলো আলবেনিয়া, ভিয়েতনাম, পোল্যান্ড এবং লিথুয়ানিয়া। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলবেনীয়, যাদের মধ্যে ৬৭৩ জন বা ৬৪ শতাংশই মাদক ব্যবসা বা মাদক রাখার অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত।
চুরি সংক্রান্ত অপরাধে বন্দি সংখ্যার অনুপাতে শীর্ষে রয়েছে কলম্বিয়া, যেখানে বন্দিদের ৩২.৭ শতাংশই এই অপরাধে আটক। এরপর রয়েছে আলজেরিয়া (২৫.৯%), মরক্কো (২০%), আয়ারল্যান্ড (১৯.১%) এবং লিবিয়া (১৬.৭%)। ব্রিটিশ বন্দিদের ক্ষেত্রে এই হার মাত্র ৮.৮ শতাংশ।
ন্যায়বিচার মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, “সরকার দ্রুতগতিতে বিদেশি অপরাধীদের বহিষ্কার করছে। গত বছর ৫,০০০ জনকে দেশ থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। আমাদের পরিবর্তন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরা আইন সংশোধন করেছি, যাতে বিদেশি বন্দিদের আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানো যায়।”






